, বুধবার, ০১ মে ২০২৪ , ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


‘মিষ্টির প্যাকেটে ঘুষের টাকা আনতে বলেন দুদক কর্মকর্তার পিএ’

  • আপলোড সময় : ২৪-০৬-২০২৩ ০৬:০৩:৫৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৪-০৬-২০২৩ ০৬:০৩:৫৯ অপরাহ্ন
‘মিষ্টির প্যাকেটে ঘুষের টাকা আনতে বলেন দুদক কর্মকর্তার পিএ’ ছবি: সংগৃহীত
ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণের চোরাচালান এবং মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগ থেকে ব্যবসায়ী আশিকুজ্জামানকে দুর্নীতির দমন কমিশনের (দুদক) নামে চিঠি দেয় একটি দালাল চক্র। তাকে জানায়, তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে। মামলা থেকে বাঁচানোর নামে চক্রটি তার কাছে প্রথমে ৫ কোটি ও পরে ২ কোটি টাকা দাবি করে।

রাজধানীর মতিঝিলে হীরাঝিল হোটেলে অগ্রিম কিছু টাকা আনতে বলা হয়। মিষ্টির প্যাকেটে করে আনা দেড় লাখ টাকা নেওয়ার সময় হাতেনাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আটক হন দুদক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) গৌতম ভট্টাচার্য। আটক করা হয় তাকে সঙ্গে আসা আরও তিনজনকে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডাকা হয়। সেখানে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের কার্পেটের দোকানের কার্পেট ও জায়নামাজ আমদানি করা ব্যবসায়ী আশিকুজ্জামানের উত্তরার বাসায় গত ২০ জুন একজন অফিসার হাজির হন। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা দুদকের মনোগ্রাম সম্বলিত খাকি রঙের খাম একটি নোটিশ নিয়ে যান তিনি। কার্পেটের ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণের চোরাচালান এবং মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত নানান অভিযোগ তোলা হয় তার বিরুদ্ধে। ডিবি, সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক এবং এনএসআই হন্য হয়ে খুঁজছে বলে তাকে ভয় দেখান। এতে ঘাবড়ে যান আশিক। তখন দুদকের ওই অফিসার আশিকুজ্জামানকে সহানুভূতি দেখানোর ভান করে মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, নোটিস নিয়ে আসা ওই ব্যক্তি হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আশিকের কথা বলিয়ে দেন। হোয়াটসঅ্যাপে ওই কর্মকর্তা মোবাইলে কথা বলা সমীচীন নয় মর্মে বিস্তারিত জানার জন্য তাকে দুদক অফিসে সশরীরে হাজির হতে বলেন। কারণ দর্শানোসহ ব্যক্তিগত শুনানির জন্য গত বছর ১০ জুলাই নির্ধারণ করা হয়।

পরে আশিকুজ্জামানকে একের পর এক ফোন করা হয় হোয়াটসঅ্যাপে। সম্পত্তি ক্রোক করা, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বেইজ্জতি করা, সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনএসআই, ডিবি পুলিশ এবং দুদকের দ্বারা গ্রেপ্তার করিয়ে কঠোর শাস্তির ভয় দেখানো হয় তাকে। একটাপর্যায়ে অভিযোগ থেকে বাঁচতে তার কাছে ঘুষ দাবি করা হয়। প্রথমে আশিকুজ্জামানের কাছে দুই কোটি টাকা চাওয়া হলেও পরে এক কোটি টাকা দিতে বলা হয়। বিনিময়ে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।

এক কোটি টাকার ভেতর গতকাল জুমার নামাজের আগে ২০ লাখ টাকা দিতে বলা হয় তাকে। বাকি টাকা আগামী রোববার ব্যাংক চলাকালে পরিশোধ করতে বলা হয়।

তখন আশিক বিষয়টি গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগকে অবহিত করলে গোয়েন্দারা দুদকে যোগাযোগ করে এবং দুদকের উপপরিচালক নজরুল ইসলামসহ হোটেল হিরাঝিলের আশেপাশে অবস্থান নেয়।

চুক্তি অনুযায়ী আশিকুজ্জামান চারটি মিষ্টির প্যাকেটে সই করে দেড় লাখ টাকা ভরে হোটেল হিরাঝিলে যান। তার কাছ থেকে মিষ্টির প্যাকেটে সংরক্ষিত টাকা গ্রহণ করার সময় আশপাশে অবস্থান নিয়ে থাকা ডিবি পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- গৌতম ভট্টাচার্য (৪২), হাবিবুর রহমান (৪২), পরিতোষ মন্ডল (৬৩) ও মো. এসকেন আলী খান (৫৭)। ওই সময় তাদের হেফাজত থেকে মিষ্টির ৪টি প্যাকেট, নগদ দেড় লাখ টাকা, ৪টি মোবাইল ফোন, দুদকের মনোগ্রাম সম্বলিত খাকি রঙের একটি খাম ও দুদকের একটি নোটিশ উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে গৌতম ভট্টাচার্য দুদকের মহাপরিচালক মানি লন্ডারিংয়ের পিএ। তার বাড়ি মৌলভীবাজার। এসকেন আলী খান চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য, বাড়ি গোপালগঞ্জ। অপর দুইজন গোপালগঞ্জের বাসিন্দা এবং পেশাগতভাবে দালাল ও প্রতারক।
দেশের ইতিহাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড

দেশের ইতিহাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড